Monday, August 4, 2025

ফেরার কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে, ফিরলেন নিথর দেহে

আরও পড়ুন

সানাইয়ের সুর, ঢাকঢোলের বাজনা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সাজানো ছিল সবকিছু। গায়ে হলুদের হলুদ রঙ তখনো শুকায়নি। মাথায় ছিল বরবেশের মুকুট, কপালে চন্দনের ফোঁটা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সব আনন্দ মুহূর্তেই থেমে গেল শোকের অন্ধকারে।

ঘটনাটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের। ঐ গ্রামের ছেলে অমিত কুমার সরকার (৩৫) ছিলেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোট ভাই আশিক সরকার ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিন বছর আগে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার নিঃসন্তান মা-বাবার হৃদয়ে নেমে এলো আরও বড় এক ঝড়।

তিন দশক প্রবাসে কাটিয়ে বাবা দিলীপ সরকার দেশে ফিরেছিলেন ছেলের বিয়ের আয়োজন করতে। ছেলের বিয়ের স্বপ্ন পূরণের আশায় দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবনকে বিদায় বলে সংসার আর ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। ছেলে অমিতের বিয়ে ঠিক করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাব গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। দিনক্ষণ ঠিক হয় বাংলা পঞ্জিকার ১৫ শ্রাবণ, অর্থাৎ ৩১ জুলাই।ফ্যামিলি ট্যুর প্যাকেজ

আরও পড়ুনঃ  আইনি পদক্ষেপ নেবেন শাবনূর

পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের আগের দিন বুধবার গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় বরযাত্রার প্রস্তুতি। বিকেলে মঙ্গল ঘট স্থাপন শেষে মা রাধারাণী সরকারের কোল ছেড়ে ধুতি-পাঞ্জাবি আর মুকুট পরে বরবেশে বের হন অমিত। বাদ্যযন্ত্র আর স্বজনদের আনন্দ উল্লাসে শুরু হয় বরযাত্রা। কনে বাড়িতে নতুন বউ আনতে ছুটে চলে গাড়িবহর।

কিন্তু পথেই ঘটে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়। রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় হঠাৎ বুকের তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন বর অমিত। সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে রাত আনুমানিক ২টার দিকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন অমিত।

আরও পড়ুনঃ  স্ত্রীকে ঘরে রেখে তালা দিয়ে পুড়িয়ে মারলেন স্বামী

ওই সময়ে কনের বাড়িতে তখনও চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। সবাই অপেক্ষায়, কখন এসে পৌঁছাবে বর আর বরযাত্রীরা। কিন্তু রাত বাড়ে, কোনো খবর আসে না। দুশ্চিন্তা বাড়ে কনের পরিবারের। একের পর এক ফোন যেতে থাকে বরের স্বজনদের কাছে। কিন্তু উত্তর আসে না। হঠাৎ খবর আসে—বর আর আসছেন না, বর চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।

যেখানে শুক্রবার ভোরে সুসজ্জিত প্রাইভেট কারে নতুন বউকে নিয়ে ঘরে ফেরার কথা ছিল, সেখানে সেই সময় একাই ফিরলেন অমিত—সাদা কাপড়ে মোড়ানো নিথর দেহে। কপালে তখনো লেগে ছিল চন্দনের সেই ফোঁটা, মাথায় মুকুটের দাগ।

আরও পড়ুনঃ  স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের জেরে দুই সন্তান হত্যা করে স্বামীর আত্মহত্যা

শোকে বাকরুদ্ধ মা রাধারাণী ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন ছেলের নিথর দেহ। বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন, ‘বাবা তোরা আমাকে কোথায় রেখে গেলি? আর কাকে নিয়ে বাঁচব?’

অমিতের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শোক আর অবিশ্বাসে ভরে ওঠে আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ